এখন ভারত : কোনওটির বয়স নাকি ৬০ লক্ষ বছর। আবার কোনওটিকে হাতের মুঠোয় বন্দি করতে পারবে একটি শিশুও। এক একটি উচ্চতায় সাড়ে ৪ মিটার। দেখতে যেন পাথুরে বুদবুদ। এমনই একটি অমূল্য বস্তূ হল জীবন্ত পাথর। রোমানিয়ায় আবিষ্কৃত এই বিস্ময়কর বস্তুর অদ্ভুত সব বৈশিষ্ট্য রয়েছে।
স্থানীয়দের দাবি, বুদবুদের মতো দেখতে এই পাথরগুলি প্রতি হাজার বছরে সর্বোচ্চ ২ ইঞ্চি পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। প্রতি ১২০০ বছরে ৪-৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পায় এগুলি।
দীর্ঘ বছর ধরে বৃষ্টির জল পড়ার জেরে নাকি পাথরের আকার বৃদ্ধি পেয়েছে। পাথরের ক্ষয় হতে পারে। কিন্তু সেগুলি কীভাবে বৃদ্ধি পায়? তবে কি এই পাথরগুলিতে প্রাণ রয়েছে? স্থানীয়দের অন্তত তেমনই দাবি। এমনও আবার হয় নাকি? নানা এই প্রশ্ন নিয়ে পাথরগুলি দেখতে রোমানিয়ায় ভিড় করেন কৌতুহলী পর্যটকরা।
বিজ্ঞানের পরিভাষায় এই পাথরের নাম হল ‘ট্রোভান্ট’। রোমানিয়ার ভৌগোলিক সাহিত্যে সর্বপ্রথম ‘ট্রোভ্যান্ট’ শব্দের ব্যবহার দেখা গিয়েছিল। ১৯৯০ সালে জিওলজিস্ট ডি এম মার্গোকি প্রথম এই পাথরটির কথা বর্ণনা করেন। এর অর্থ সিমেন্ট দিয়ে জোড়া বালুকণা। কসটেস্টি নামে রোমানিয়ায় একটি ছোট গ্রামে মূলত এ ধরনের অংসখ্য পাথর দেখতে পাওয়া যায়। সে দেশের রাজধানী বুখারেস্ট থেকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার দূরে রয়েছে এই গ্রামটি। ওই গ্রামের পাশাপাশি রোমানিয়ার অন্তত ২০টি জায়গাতেও এমন পাথর ছড়িয়ে রয়েছে।
বিজ্ঞানীদের মতে, রোমানিয়ায় নানা বয়সের ট্রোভ্যান্ট রয়েছে। মাটি থেকে এগুলির উৎপত্তি হয়নি। প্রাকৃতিক কারণে বিভিন্ন ভৌগোলিক সময় এগুলি তৈরি হয়ে গিয়েছে। বালির খাদেও দেখা যায় এই ধরনের পাথর। প্রায় গোলাকার বা অর্ধবৃত্তাকার এই ট্রোভ্যান্টগুলি আসলে বালুকণার আস্তরণে ঢাকা বেলেপাথর। অনেকগুলি পাথরের পাশে আবার সেটির ‘যমজ’ ট্রোভ্যান্ট দেখা যায়। যা পাথরের উপরে ঢাকনার মতো আস্তরণ তৈরি করেছে। প্রায় ৬০ লক্ষ বছর আগে ভূমিকম্পের কারণে এই পাথর তৈরি হয়েছিল। বছরের পর বছর ধরে তার উপর বালি, পাথরের আস্তরণ জমা পড়েছে। সেগুলিকে আঠার মতো জুড়ে রেখেছে চুনাপাথরের আস্তরণ। এরপর ভারী বৃষ্টির জেরে এর উপরিভাগের আস্তরণ ভেদ করে জল ঢুকে গিয়েছে। ধীরে ধীরে তা পাথরগুলির উপরে জমা হতে শুরু করেছে। যদিও এই প্রক্রিয়াটি ঠিক কী ভাবে হয়, সে বিষয়ে বিশদে জানাতে পারেননি বিজ্ঞানীরা।
তবে তাদের মতে, বৃষ্টির জলে থাকা খনিজ পদার্থের সঙ্গে বিক্রিয়ায় ট্রোভ্যান্টের ভিতর অত্যধিক চাপ তৈরি হয়। যার জেরে পাথরগুলি ফুলেফেঁপে ওঠে। যেন মনে হয় সেগুলির বৃদ্ধি হয়েছে। আশ্চর্যের ব্যাপার হল, পাথরগুলিকে কাটার পর এর মধ্যে গাছের গুঁড়ির মতো গোল রিং দেখা গিয়েছে। যা থেকে পাথরগুলির বয়স জানা যায়।
তবে বৈজ্ঞানিকদের মতে, এগুলিকে সে অর্থে ‘জীবন্ত’ বলা যায় না। যদিও স্থানীয় বা পর্যটকেরা এগুলিকে ‘জীবন্ত’ বলেই মনে করেন। রোমানিয়ার প্রত্যন্ত গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দারা এই পাথরের দৈবিক ক্ষমতা রয়েছে বলে বিশ্বাস করেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পাথরের আকার আয়তন বাড়ে, তা নানা প্রাণীর মতো হয়, এমনকী মানুষের মতো আকারও হয় পাথরের। তাঁরা এই পাথর দিয়েই তৈরি করেন বিভিন্ন প্রাণী ও দেব-দেবীর মূর্তিও।
কসটেস্টি গ্রামের ট্রোভ্যান্টগুলির আরও বৈশিষ্ট্য রয়েছে। বৃহদাকার পাথরগুলির পাশে ছোট আকারের পাথরও দেখা যায়। সেই পাথরগুলির গায়ে ছোট ছোট গোলাকার কাঁটার মতো অংশ দেখা যায়।