EKHON BHARAT :- শাস্ত্র অনুযায়ী, অসুর নিধনে সাতদিন ধরে দেবী দুর্গাকে ভয়াবহ যুদ্ধ করতে হয়। সেই লড়াই শেষে জয়ী মা দুর্গা। কিন্তু, আমাদের সমাজের দুর্গাদের লড়াই চলে সারা জীবনই। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে যখন বেশিরভাগ যানবাহনের স্টিয়ারিং একজন পুরুষের হাতে থাকে, তখন একজন মহিলা হয়ে যাত্রীদের গন্তব্যে পৌছে দেওয়ার স্টিয়ারিংটা হাতে ধরেছেন কাজল। বারাসত শহরের অন্যতম মহিলা টোটো চালক তিনি। বেঁচে থাকার জন্য তো অর্থ উপার্জন করতেই হবে। তাই এই ভাবেই বছরের পর বছর লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন কাজল লোহার।
এ যেন এ যুগের সাক্ষাৎ দুর্গা। হ্যাঁ দুর্গাই বটে! কারণ, একই সঙ্গে একাধিক দায়িত্ব একাধিক পরিচয় তার। কখনও মঞ্চে নিজে দুর্গা রূপে মহিষাসুরমর্দিনী হয়ে দর্শকের কাছে উপহার দিচ্ছে। আবার কখনও টোটোর স্টিয়ারিং হাতে সকাল থেকে রাতে চলে বেড়ায় বারাসত শহরের আনাচে-কানাচে। পেটের দায়ে টোটোর স্টিয়ারিং হাতে নিলেও কাজল একজন প্রতিভাবান নৃত্যশিল্পী।
পরিবারের অমতে আজ থেকে ৮ বছর আগে ভালোবেসে করেছিলেন কাজল। বিয়ের পর সামনে আসে স্বামীর আসল রূপ। প্রতিদিন নেশা করে বাড়িতে আস্ত গুণধর স্বামী এরপর চলতো কাজলের উপর অকথ্য অত্যাচার চালাত। স্বামী এতটাই নেশা করত যে একসময় তার নার্ভের সমস্যা দেখা দেয়, তার মাথা সমস্যা দেখা যায়। এরপর আরও বাড়ে অত্যাচারের মাত্রা। ইতিমধ্যেই তাদের একটি সন্তানও হয়। তখন সন্তানের বয়স ৬ মাস। সেই অবস্থায় বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয় কাজল। চলে আসেন বাপের বাড়িতে।
সংসারের হাল ধরতে টোটো নিয়েই পথে নামলেন বারাসতের নৃত্যশিল্পী কাজল
প্রতিদিন চড়েন! কিন্তু জানেন কি রাজ্যে প্রতিদিন কতগুলি লোকাল ট্রেন চলে?
এরপর বিবাহ বিচ্ছেদ। কিন্তু সন্তানকে মানুষ করবেন কীভাবে? সিদ্ধান্ত নিলেন টোটো চালাবেন! লোন করে টোটো কিনে টোটো বেড়িয়ে পড়েন বারাসত শহরে। তবে রাস্তায় টোটো চালাতে গিয়ে কোনদিন কোন সমস্যা হয়নি। বরং সকলের সহযোগিতা পেয়েছেন কাজল। আজ কাজলকে দেখে অনেক নারীই এই পেশাকে বেছে নিয়েছেন।
কাজল বাড়ির সকল কাজ সেরে টোটো নিয়ে বেড়িয়ে পরে, বাড়ি ফিরে আবার নাচের প্রশিক্ষণ দেয়। কিছু ছাত্র-ছাত্রীও আছে যারা কাজলের সঙ্গে মঞ্চে পারফর্ম করে। মধ্যমগ্রামে শিশিরকুঞ্জে তার বাপের বাড়িতেই বর্তমানে থাকে কাজল লোহার। জানা যায়, কাজল আদিবাসী সম্প্রদায়ের হওয়ায় সেই আদিবাসী নৃত্যকে বাঁচিয়ে রাখতে টোটো চালানোর পাশাপাশি নাচের একটি দল তৈরি করেছে। বিভিন্ন জায়গায় নৃত্য পরিবেশন করেন তারা।