রামধনুর রং আকাশ থেকে নেমে এসেছে পাহাড়ে ! কোথায় লুকিয়ে আছে এই রহস্য?

Follw Us Now

এখন ভারত : ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়ছে আর দুরে নীল আকাশে দেখা যাচ্ছে রামধনু। এমন এক পরিবেশে রবীন্দ্রনাথের সেই গানের কথাই মনে আসে, ‘হৃদয় আমার নাচে রে, আজিকে ময়ূরের মতো নাচে রে’। আর নীল আকাশের ক্যানভাসে ভেসে ওঠা

রামধনুর সাত রং যদি ছুঁয়ে দেখা যেত তাহলে কি অপূর্বই না হত! তবে এটা সকলেরই জানা যে, বাস্তবে তা কখনও সম্ভব নয়। তাই জীবনের এই পরম আনন্দ পাওয়া থেকে আমাদের সবাইকেই বঞ্চিত থাকতে হয়। কিন্ত এই মহাবিশ্বে রয়েছে তেমনই এক আশ্চর্য বিস্ময়!
রামধনুর সাত রঙে রঙিন এক আশ্চর্য পাহাড়! পাহাড় বলতেই আমাদের চোখে ভেসে ওঠে রুক্ষ শুষ্ক কালো অথবা ধূসর ভূখণ্ড অথবা বরফে ঢাকা শ্বেত শৃঙ্গ। কিন্তু রামধনুর রং-এর পাহাড়! 
কোথায় আছে এমন অবিশ্বাস্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্য?
প্রকৃতির এমন অপরূপ রূপ উপচে পড়ছে চিনের উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে গানসু প্রদেশের অন্তর্গত জাংহে শহরে। এই পাহাড় ‘দাংশা ল্যান্ডফর্ম জিওগ্রাফিক্যাল পার্ক’এর অন্তর্গত। এই পাহাড় বেগুনি, নীল, সবুজ, হলুদ, কমলা, লাল নানা রঙে রঙিন৷ চারিদিকে শুধু রঙের মেলা। পর্বতমালা আসমানী, কমলা, লাল, হলুদ, সবুজে রাঙা। প্রকৃতি আপন মনের মাধুরী মিশিয়ে সুবিশাল ক্যানভাসে তুলির টানে সৃষ্টি করেছে এই রংমহল৷
উত্তর চিনের গানসু প্রদেশের লিনজে জেলায় ৪০০ বর্গ কিলিমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই রামধনু পর্বত বা রেনবো মাউন্টেন। এই পর্বতের বর্তমান নাম গানসু ঝাংহে দাংশা ন্যাশানাল পার্ক৷
কিন্তু পাহাড়ে এত রং ভরাল কে?  ভূবিজ্ঞানীদের মতে, বহু বহু বছর ধরে টেকটনিক প্লেটের সংঘর্ষের ফলে শুষ্ক পর্বতের গায়ে এমন রামধনুর সাত রং ফুটে উঠেছে৷ টেকটনিক প্লেটের সংঘর্ষের ফলে ভূগর্ভ থেকে বেরিয়ে এসেছিল শিলাস্তর৷ ওই
শিলাস্তরে ছিল প্রচুর খনিজ পদার্থ, রঙিন সিলিকা-সহ আরও নানান উপাদান। বহু বছর ধরে ঋতু পরিবর্তন, ঝড়, বৃষ্টি, তুষারপাত ও নানা রকম রাসায়নিক বিক্রিয়ায় ক্রমশ পরিবর্তিত হয়েছে তার রূপ। এইভাবে এক সময় তৈরি হয়েছে বর্তমানের রেনবো মাউন্টেন।
হিমালয়ের অনেক আগেই এই পাহাড় তৈরি হওয়া শুরু হয়ে গিয়েছিল। ভূবিজ্ঞানীদের গবেষণা অনুযায়ী, পাহাড়টি তৈরি হতে সময় লেগেছে প্রায় ২ কোটি ৪০ লক্ষ বছর।
জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত প্রখর সূর্যের তাপ থাকে। সেই সঙ্গে মাঝেমাঝেই বৃষ্টিপাত হয়। এই সময়েই রেনবো মাউন্টেন তার রংয়ের ঝুলি নিয়ে অপেক্ষা করে পর্যটকদের জন্য৷ সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের আগে এই পাহাড় আলোর খেলায় মেতে নানা রঙে সেজে ওঠে৷ ভোরবেলা এবং গোধুলির প্রাক্কালে চতুর্দিকের আলোয় ধীরে ধীরে রং বদলাতে শুরু করে আর একসময় ছড়িয়ে দেয় তার রঙের ছটা।
২০১০ সালে ইউনেসকো বিশ্বের অন্যতম পর্যটনস্থল রূপে এই পাহাড়কে ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট’-এর স্বীকৃতি দেয়। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটকরা আসেন প্রকৃতির এই বিস্ময়কে চাক্ষুষ করতে৷ তবে গোটা এলাকায় ঘাস ছাড়া তেমন কোন উদ্ভিদ দেখা যায় না। 
সাধারণত পাহাড়ের বেড়াতে গিয়ে অনেকেই স্মৃতি হিসেবে রং বেরঙের পাথর নিয়ে আসেন। কিন্ত রেনোবো মাউন্টেনের ক্ষেত্রে রয়েছে বিশেষ নিয়ম৷ জানা যায়, এখান থেকে রঙিন পাথর নিয়ে যাওয়া দণ্ডনীয় অপরাধ৷ এছাড়া পার্কটিতে সাধারণ পর্যটকদের বাস প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। অবশ্য পার্শ্ববর্তী এলাকা ঘুরে দেখার জন্য পার্কের মধ্যেই গাড়ির ব্যবস্থা রয়েছে৷ পুরো পার্কটি ঘুরে দেখতে সময় লাগে প্রায় ঘণ্টা দুয়েক। প্রকৃতির এই অপরূপ রূপ উপভোগ করতে পর্যটকদের কাছে অবশ্যই এই দু’ঘণ্টা যেন কিছুই নয়। অনেকেই তাই ঘন্টার পর ঘন্টা এই পাহাড় ঘুরে দেখতে ক্লান্তি বোধ করেন না।

ট্রেন্ডিং খবর