বাঙালির শ্রেষ্ঠ উত্সব দুর্গাপুজো
EKHON BHARAT:- বাঙালির শ্রেষ্ঠ উত্সব দুর্গাপুজো শুরু হতে আর হাতে গোনা কয়েক দিন মাত্র বাকি। পাড়ায় পাড়ায় মণ্ডপ সাজানোর কাজ চলছে জোরকদমে। কুমোরটুলিতেও ব্যস্ততা তুঙ্গে বাজারে চলছে ক্রেতাদের কেনাকাটার ভিড়। পুজোর ক-দিন সবার নজর থাকে মণ্ডপে স্বমহিমায় আসীন দশভূজা দেবী দুর্গার দিকে। কিন্তু জানেন কি, দুর্গা মূর্তি তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী কোথা থেকে সংগ্রহ করা হয়?
পুজোর বেশ কয়েক মাস আগে থেকেই নাওয়া খাওয়া ভুলে প্রতিমা গড়ার কাজে দিনরাত এক করে দেন কুমোর পাড়ার শিল্পীরা। শুরু হয়ে যায় পুত্র কন্যা সহ মা দুর্গার মূর্তি তৈরির কাজ। খড়ের গায়ে মাটি লেপে, তার উপর রং করে একটু একটু করে ফুটিয়ে তোলা হয় দেবী দুর্গার মৃন্ময়ী মূর্তি। সমস্ত আচার বিচার মেনে এই মূর্তিগুলিই প্রতিষ্ঠা করা হয় মণ্ডপে মণ্ডপে। হুগলি নদীর পাড়ের নরম কাদা মাটি মূর্তি তৈরির জন্য আদর্শ। কিন্তু এই মাটি শুধু নদীর পাড় থেকে আসে না। হিন্দু শাস্ত্র অনুসারে দেবী দুর্গার মূর্তি তৈরির সময় চারটি জিনিস অপরিহার্য। এই চারটি জিনিস হল – গঙ্গামাটি, গোবর, গোমূত্র ও নিষিদ্ধপল্লীর মাটি।
প্রথাগত বিশ্বাস অনুসারে মা দুর্গার মূর্তি তৈরিতে নিষিদ্ধ পল্লী থেকে মাটি নিয়ে আসতে হয়। এই মাটি ছাড়া দুর্গা মূর্তি তৈরি করা সম্ভব নয়। কিন্তু কেন এই রীতি ? সমাজ যাঁদের দূরে ঠেলে দিয়েছে, অবজ্ঞা আর বঞ্চনার পাহাড় জমে উঠেছে যাঁদের দেওয়াল বেয়ে, ঘৃণা আর নোংরা দৃষ্টি ছাড়া যাঁদের ভাগ্যে আর কিছুই জোটেনি, তাঁদের ঘরের মাটিই আবার দেবীমূর্তির অপরিহার্য অঙ্গ !
প্রচলিত বিশ্বাস অনুসারে এই মাটিতে পূণ্যমাটি বলা হয় কারণ, নিষিদ্ধপল্লীতে যাঁরা গমন করেন, তাঁরা তাঁদের যাবতীয় পূণ্য যৌনকর্মীর ঘরের দরজার বাইরে রেখে ভেতরে কামনা বাসনার জগতে প্রবেশ করেন। ফলে ওই মাটি মানুষের সব চারিত্রিক গুণে পুষ্ট হয়ে পূণ্য মাটিতে পরিণত হয় বলে মনে করা হয়।
আরও খবর- এই পোশাকগুলো পরে আর ঢোকা যাবে না পুরীর মন্দিরে, শীঘ্রই চালু নয়া বিধি
নিষিদ্ধপল্লীর মাটি ছাড়া কেন সম্ভব হয় না মা দুর্গার মূর্তি নির্মাণ? জানুন আসল কারণ
নিষিদ্ধপল্লীতে গিয়ে কোনও যৌনকর্মীর কাছে মাটি ভিক্ষা করতে হয় মূর্তি শিল্পীকে। কোনও যৌনকর্মীর দরজায় দাঁড়িয়ে তাঁর হাত থেকে এই ‘পূণ্যমাটি’ সংগ্রহ করতে হয়। আগেকার দিনে পুরোহিত নিজে এই মাটি সংগ্রহ করতে যেতেন। এখন মূর্তিশিল্পীরাই নিষিদ্ধপল্লী থেকে মাটি আনতে যান।
তবে দুর্গা মূর্তি তৈরিতে নিষিদ্ধপল্লীর মাটি ব্যবহার করার পেছনে আরও একটি প্রচলিত বিশ্বাস রয়েছে। এটি হল – দুর্গা পুজোর সময় দেবীর যে নয় রূপের পুজো করা হয়, তা নবকন্যা নামে পরিচিত। এই নয় রূপ হল – নটী, ধোপানি,ব্রাহ্মণী, শুদ্রানী, গোয়ালিনী, কাপালিনি, নাপিতানি, মালিনী ও পতিতা।