EKHON BHARAT :- পথেই ওদের জন্ম, বেড়ে ওঠাও সেই পথে। থাকা-খাওয়া, বিয়ে-সংসার সবই হচ্ছে ফুটপাতে। সভ্য সমাজের মানুষরা ওদের ‘ফুটপাথবাসী’ বলে থাকেন। কাগজ কুড়িয়ে, রিকশা-ভ্যান চালিয়ে কিংবা হোটেল বা লোকের বাড়িতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে ওরা। বছরের পর বছর ধরে চলছে কয়েক হাজার ছিন্নমূল মানুষের এইভাবে বসবাস। এই শহরের ইতিহাস যেমন বহু পুরনো ঠিক তেমনই পুরনো ফুটপাতে বেঁচে থাকা মানুষের কঠিন সংগ্রামী গল্পগুলোও। আবহাওয়ার পরিবর্তন হলেও, ওঁদের ঠিকানা বদলায় না।
রাস্তার ধারে বন্ধ দোকানের সাটারে সামনে দড়িতে ঝুলছে জামা কাপড়। নীচে ঠেস দিয়ে রাখা বালিশ। ছেঁড়া কাপড়, পোঁটলা। এদিক সেদিক ছড়ানো খাবারের থালা বাসন। খোলা আকাশের নিচেই একটুকরো সংসার পেতে বসে থাকা। আবহাওয়া বিরূপ হলে ভরসা বড়জোর ছেঁড়া-ফাটা একটা প্ল্যাস্টিক। তা-ও সকলের জোটে না। এমন অসুরক্ষিত জীবনযাপনেই যেন ওরা অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে। দিনের আলোতে বাথরুমে যাওয়ার কোন জায়গা নেই। অনেক সময় মলমূত্রের জন্যে ড্রেনের ওপরেই ভরসা করে থাকেন। কারণ পাবলিক টয়লেট ব্যবহার করতে গেলে লাগবে টাকা! সেই সামর্থ্য কোথায় ! তিন চারদিন পরে স্নানের সুযোগ পেলে ভেজা কাপড় দিয়ে সন্তানদের শরীর মুছিয়ে দেন। নানা রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত ওরা।
মাঝেমধ্যেই সরকারি তরফে তাঁদের নামধাম সব লিখে নিয়ে যাওয়া হয়। দেওয়া হয় আশ্রয়স্থলের প্রতিশ্রুতি। দিন বদলের আশায় থাকি ফুটপাতবাসীরা। কিন্তু যুগ যুগ পরেও সে আশা তাদের পূরণ হয় না। গোটা কলকাতা শহরে এমন বহু ফুটপাত রয়েছে!
কলকাতা শহরে প্রথম ফুটপাত কোনটি জানেন?
এ শহরের ছিন্নমূল মানুষের ঘরই যখন খোলা আকাশ
যেতে হবে না বিদেশে, সপ্তাহন্তে এক টুকরো সিঙ্গাপুর মিলবে দিঘাতেই
তথ্য বলছে কলকাতা শহরের প্রথম ফুটপাত তৈরি হয় চৌরঙ্গীতে। ইতিহাস এবং লেখক কৃষ্ণপ্রিয় দাশগুপ্তের বইতে দেওয়া তথ্যে যা জানা যায় প্রায় একশো পঁয়ষট্টি বছর আগে কলকাতায় প্রথম ফুটপাত তৈরির পরিকল্পনা করা হয়। পরিকল্পনা করেছিলেন মিউনিসিপ্যালিটির কনজারভেন্সি অফিসার উইলিয়ম ক্লার্ক। পুরসভার ওল্ডারম্যানদের তিনি বুঝিয়েছিলেন, জমা জল থেকে নানা রোগ ছড়ায়। সেই রোগ ছড়ানো আটকাতে রাস্তার পাশের পাকা নর্দমাগুলোর কংক্রিট দিয়ে ঢাকতে হবে। আর পথচারীরা সেই ঢাকা দেওয়া নর্দমার উপর দিয়ে দিব্যি হাঁটতে পারবেন। সেটাই হবে ফুটপাত। সেই ফুটপাতেই ধীরে ধীরে হয়ে উঠেছে বহু আশ্রয়হীনের মাথা গোঁজার ঠাঁই। কলকাতার বহু ফুটপাতের মধ্যে এমনই এক ফুটপাত হল আমহার্স্ট স্ট্রিট। এখানেই প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে রয়েছেন অনেক মানুষ।
পুরসভা সূত্রের খবর, শহরের বিভিন্ন এলাকায় এমন অনেক নৈশাবাস তৈরি করা হয়ে আছে। তবে সেখানে সম্পূর্ণ নিখরচায় রাত কাটানোর ব্যবস্থা থাকলেও অনেকেরই ঠাঁই হয় না। তাঁদের রাত কাটে সেই ফুটপাতেই।