মেট্রো স্টেশনে বসেই শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন পূরণে ব্যস্ত খুদে পড়ুয়া, আব্দুল’-কে হ্যাটস অফ নগরবাসীর

Follw Us Now

এখন ভারত : শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি ঘিরে বর্তমানে সরগরম গোটা রাজ্য। পড়াশোনার পাশাপাশি জীবনের নৈতিকতার পাঠ শিখিয়ে ছাত্র ও সমাজ গঠনের মূল কান্ডারী শিক্ষকরা। অথচ বেনিয়ম ও টাকা দিয়ে চাকরি পাওয়ার দায়ে তাঁদের অনেকেই ইতিমধ্যেই চাকরি খুইয়েছেন। কিন্তু কে কি করছেন বা কার কি হচ্ছে তাতে কিছু যায় আসে না আব্দুলের। সে আপন মনেই নিজের স্বপ্ন পূরণে ব্যস্ত এখন থেকে। তাই আপাতত অন্য কোন দিকে দেখার ফুরসত নেই তার। কোন স্বপ্ন পূরণ করতে চলেছে সে ? কে এই আব্দুল তার পরিচয় জানতে চান?

তৃতীয় শ্রেণির পড়ুয়া আব্দুল। কলকাতার অন্যতম ব্যস্ত মেট্রো স্টেশনের গেট দিয়ে যাতায়াত করছেন অসংখ্য নিত্যযাত্রী। কত লোকের আনাগোনা। কোলাহল। অথচ তার মধ্যেও দিব্যি খাতায় অঙ্ক কষতে ব্যস্ত ছোট্ট ছেলেটা। কৌতুহলবশত সামনে এগিয়ে কথা বলতেই জানা গেল ছোট্ট আব্দুলের কঠিন জীবন সংগ্রামের কাহিনী।

দক্ষিণ কলকাতার যতীন দাস পার্ক মেট্রো স্টেশনের আশুতোষ কলেজ সংলগ্ন ১ নম্বর গেটে বসে এভাবেই দিনের পর দিন পড়াশোনা করে তৃতীয় শ্রেণির পড়ুয়া আব্দুল লস্কর। কারণ এখন থেকে লড়াই না চালালে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হবে কীভাবে! হ্যাঁ, এই বস থেকে তার লড়াই বটে! সামনের ফুটপাথের উপর আব্দুলের বাবার অস্থায়ী দোকান। ডিমটোস্ট, ঘুঘনি, চা-পাউরুটি বিক্রি করে কোনওরকমে চলে সংসার। দোকানের এই কয়েক হাত জায়গাতেই তাঁদের ছোট্ট সংসার। আলদা করে পড়াশোনা করার কোনও ঘর নেই। তাই মেট্রো স্টেশনের গেটকেই নিজের ‘স্টাডি রুম’ বানি ফেলেছে একরত্তি আব্দুল। সেই স্টাডি রুমেই উৎসাহে চলছে পড়াশুনা। ছোট্ট আবদুলের লড়াই আমাদের মনে করিয়ে দিল বিদ্যাসাগরের কথা। একসময় তিনিও রাস্তার আলোতে বসে পড়াশোনা করেছেন। তার পান্ডিত্য আর পরিচয় আলাদা করে বলার কোন প্রয়োজন নেই।

এই বয়সে তার জ্ঞানবুদ্ধি, আর ইচ্ছে শক্তির কাছে হার মানবে প্রাপ্তবয়স্ক অনেকেই। আব্দুল বলে, ‘বাচ্চাদের পড়ানোর জন্য আমি শিক্ষক হতে চাই। এতে নিজের পড়াশোনাও হবে, বাচ্চাদেরও পড়ানো যাবে। পাশেই কলেজ, দাদা-দিদিদের সেখানে যেতে দেখে আমার খুব ভালো লাগে। মনে হয় আমি যদি কলেজে পড়তাম তাহলে খুব ভালো হত।’

ছেলেকে পড়াশোনার ঠিকঠাক পরিবেশ দিতে না পারলেও আব্দুলের উৎসাহ দেখে গর্বে বুক ভরে যায় তার বাবা লস্করের। তিনি বলেন, ‘আমি তো শিক্ষিত নই, পড়াশোনাও করতে পারিনি। তাই আমি চাই আমার ছেলে শিক্ষিত হোক। বড় হয়ে ও যদি শিক্ষক হয় আমার এর থেকে বেশি গর্বের আর কিছুই থাকবে না। আমি ছেলেকে দোকানের কোনও কাজ করতে দিতে চাই না। আমার ছেলে পড়াশোনায় খুব ভালো, তাই আমি যতদূর সম্ভব হবে ওকে পড়াব। এছাড়াও আমার ওকে ক্যারাটে শেখানোর ইচ্ছেও রয়েছে। আমি জানি না, সেটা সম্ভব হবে কি না। আমার ছোটো এক মেয়েও রয়েছে। আমি ওদের মানুষের মতো মানুষ করে তুলতে চাই।’
আব্দুলের এই সংগ্রাম আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে প্রতিভা আর ইচ্ছে শক্তি থাকলে অভাব কখনোই বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না। জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে পথ ঠিকই খুঁজে পাবে সে। আব্দুল’-কে হ্যাটস অফ নগরবাসীর। তুমি প্রতিষ্ঠিত হও আব্দুল। জীবনে মানুষের মতন মানুষ হও। শিক্ষক হয়ে নিজের স্বপ্ন পূরণ করো। এখন ভারত ডিজিটালের পক্ষ থেকে তোমার স্বপ্ন পূরণের জন্য রইল অনেক অনেক শুভকামনা।

ট্রেন্ডিং খবর