এখন ভারত : পুষ্টিগুণের ভান্ডার বেল আমাদের দেশের দারুণ জনপ্রিয় একটি ফল। গরমে ঠাণ্ডা এক গ্লাস বেলের শরবত নিমেষেই প্রাণ জুড়িয়ে দেয়। পাশাপাশি নানা রোগের উপশম ঘটাতেও বেলের জুড়ি নেই। বেলের ইংরেজি নাম বেঙ্গল কুইন্স। বেলের বহু ওষধি গুণ রয়েছে। এতে আছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন-সি, ভিটামিন-এ, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও পটাশিয়াম। এছাড়া ভিটামিন এ, বি, সি, বিভিন্ন খনিজ এবং ফাইবারসহ প্রচুর পুষ্টিপদার্থ। এই ফল হজম, কোষ্ঠকাঠিন্য, অম্লতা, অনিয়মিত পেট সাফ জাতীয় পেটের সমস্যার ক্ষেত্রে উপকারী। ভরপুর অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট রয়েছে এতে। নানা ভিটামিনেরও খনি। একাধিক খনিজ পাওয়া যায় বেলে। পর্যাপ্ত কার্বোহাইড্রেটও মিলবে।
ভারতের প্রাচীন আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে বেলের ওষধিগুণের কথা বারবার বলা হয়েছে। একাধিক রোগের চিকিৎসাতেও বেলের উপাদান প্রয়োগের কথা রয়েছে। আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে বেল বমি, রক্তবমি, অধিক রক্তক্ষরণ, বাচ্চাদের বিছানায় প্রস্রাব করা, ডায়াবেটিস, ব্রংকাইটস, অ্যাজমা, পানিবসন্ত ও মাড়ি প্রদাহের ওষুধ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। বেল প্রস্টোজেন হরমোন লেভেল বাড়িয়ে নারীদের ইনফার্টিলিটির ঝুঁকি কমায়। তাছাড়া প্রসব-পরবর্তী ডিপ্রেশন কমাতেও খুবই কার্যকরী। হোমিওপ্যাথিতে বেলের পাতা ও ফল থেকে দু’টি মূল্যবান ওষুধ তৈরি হয়।
১) কাঁচা বেল ডায়েরিয়ার জন্য অব্যর্থ ওষুধ। যদি অনেক দিন ধরে আপনি এই সমস্যায় ভোগেন তাহলে বেল খান। কাঁচা বেল স্লাইস করে কেটে রোদে শুকিয়ে নিন। তারপর তা গুঁড়ো করে নিন আর তা ১ চামচ নিয়ে ব্রাউন সুগার আর গরম জলে মিশিয়ে খান। দিনে ২ বার খেতে হবে এই জল।
২) পাকা বেলে আছে মেথানল নামের এক উপাদান যা ব্লাড সুগার কমাতে কাজ করে। তবে ভালো ফল পেতে পাকা বেল শরবত করে নয়, এমনিই খেতে হবে।
৩) বেল মল পরিষ্কার হতে সাহায্য করে। নিয়মিত টানা ৩ মাস যদি আপনি বেলের শরবত খেতে পারেন তাহলে আপনার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হবে।
৪) পাকস্থলীর আলসার, পাইলস রোগে উপকারী বেল। এটি শক্তিবর্ধক হিসেবে কাজ করে। পাকা বেলের শাঁসে সেই ফাইবার আছে যা আলসার উপশমে সাহায্য করে। সপ্তাহে ৩ দিন বেলের শরবত খেলে আলসার কমে। এছাড়া বেলের পাতা সারা রাত জলে ভিজিয়ে রেখে পরের দিন তা খেলেও আলসার কমে যায়।
৫) পাকা বেলে আছে অ্যান্টি মাইক্রোবায়াল উপাদান, যা যক্ষ্মা কমাতে সাহায্য করে।
৬) বেলে আছে অ্যান্টি প্রলেফিরেটিভ ও অ্যান্টি মুটাজেন উপাদান। এই উপাদান সহজে টিউমার হতে দেয় না। আর যেহেতু এই ফলে হাই অ্যান্টি অক্সিডেন্ট উপাদান আছে তাই ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়।
৭) বেল রক্ত শুদ্ধ করতে খুব ভালো কাজ দেয়। খানিকটা পাকা বেলের রসের সঙ্গে চিনি মিশিয়ে খেলে রক্ত শুদ্ধ হয়। ট্যান দূর হয়। শুধু রক্ত নয়, কিডনি ও লিভারের কাজও ঠিক করে।
৮) বেল আপনার ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখবে।
৯) বেলের শাঁস ত্বককে সূর্যরশ্মির ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করে এবং ত্বকের স্বাভাবিক রং বজায় রাখে।
১০) নিয়মিত বেল খেলে আর্থ্রারাইটিসের সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন। এছাড়াও কিডনির কার্যকারিতা ঠিকমতো চালাতে সাহায্য করে বেলের উপাদান।