ভাঙ ছাড়া হোলি অসম্পূর্ণ, দোলে ভাঙ ব্যবহারের পিছনে রয়েছে মহাদেবের যোগ!

Follw Us Now

 

আর মাত্র ঘণ্টাখানেকের অপেক্ষা। তারপরই শেষ্ঠ রঙের উৎসব হোলি। গোটা দেশে ব্যাপক উৎসাহের সঙ্গে উদযাপিত হয় এই উৎসব। এবছর হোলি উৎসব ১৮ মার্চ। কিন্তু, জানেন কি, হোলি উৎসব ভাঙ ছাড়া একেবারেই অসম্পূর্ণ। মানুষ এই দিনে বিভিন্ন রকমের ভাঙ যেমন, শিং লস্যি, হেম্প পাকোড়া, হেম্প থান্ডাই এবং হেম্প গুজিয়া খায়। বছরের এই একটি দিন ভাঙ বা পানীয়তে গলা ভেজানো কোনও অপরাধ বলে মনে করা হয় না। একরাশ আনন্দ আর প্রচুর খাওয়া দাওয়ার পর দিনের শেষে এক গ্লাস ভাঙ মেশানো দুধের ঘোলে সব ক্লান্তি দূর হয়ে যায়। ভারতের বিভিন্ন জায়গা এই ভাঙ নানাভাবে ব্যবহার করা হয়। ডাক্তারি পরিভাষায় ভাঙের নাম, ডিকার্বোক্সিলেটেড মারিজুয়ানা। দোলে এই ভাঙ কেন ব্যবহার করা হয় জানেন? শুধুই কি রঙের উৎসবে আরেকটু আনন্দ যোগ করার জন্য? নাকি এর পিছনে রয়েছে অন্য কোনও কারণ? জেনে নেওয়া যাক এর কারণ-
হাজার হাজার বছর ধরে খাবার ও পানীয়তে ভাঙ মেশানোর রীতি রয়েছে আমাদের দেশে। গাঁজার পাতা, ফুল ও কুঁড়ি শুকিয়ে তৈরি হওয়া ভাঙ দোলের বিশেষ আকর্ষণ। দোলের সময় বিশেষ করে ঠান্ডাই বা পকোড়ায় মিশিয়ে খাওয়া হয় ভাঙ। 
ভাঙ ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে মূলত গাঁজার পাতা, ফুল ও কুঁড়ি শুকিয়ে তৈরি করা হয়। প্রাচীন গ্রন্থ অর্থবেদে ভাঙকে একটি উপকারী ভেষজ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। এছাড়াও ধর্মগ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে সারা দেশে বিভিন্ন ভাবে ব্যবহার করা হয় ভাঙ। মহাশিবরাত্রি এবং হোলির দিন ব্যবহৃত হয় ভাঙ। গ্রামীণ ভারতের কিছু অঞ্চলে, বহু মানুষ গাঁজা গাছকে বিভিন্ন ঔষধি বৈশিষ্ট্যের জন্য ব্যবহার করেন। এটি জ্বর, আমাশয় এবং সানস্ট্রোক, কফ পরিষ্কার করে, হজমে সহায়তা করে, খিদে বাড়ানো-সহ একাধিক রোগ নিরাময় করে বলে বিবেচনা করা হয়।
ভাঙ আমার সঙ্গে একাধিক পৌরাণিক বিশ্বাস জড়িয়ে রয়েছে। মনে করা হয়, সমুদ্র মন্থনের সময় যে বিষ বেরিয়েছিল তা শিব কন্ঠে ধারণ করেছিলেন। কিন্তু গলা দিয়ে নামতে দেননি। এই বিষ খুব গরম ছিল। ফলে শিব এর তীব্র জ্বালা অনুভব করতে লাগলেন এবং শিব কৈলাস পর্বতে গেলেন। বিষের তাপ কমানোর জন্য শিব ভাঙ সেবন করেন। ভাঙকে শীতল বলে মনে করা হয়। সেই থেকেই ভগবান শিব ভাঙ খুব পছন্দ করেন। এও বিশ্বাস করা হয় যে, ভক্ত প্রহ্লাদকে হত্যার চেষ্টাকারী হিরণ্যকশিপুকে বধ করার জন্য ভগবান বিষ্ণু নরসিংহের রূপ ধারণ করেছিলেন। হিরণ্যকশিপুকে হত্যা করার পর তিনি ক্ষিপ্ত হন। তাকে শান্ত করতে ভগবান শিব শরভ অবতার গ্রহণ করেন। হোলির দিনে ভাঙ খাওয়ার এটিও অন্যতম একটি কারণ বলে মনে করা হয়। এটি প্রসাদ হিসাবেও দেওয়া হয়।
কথিত রয়েছে যে, একবার শিব তাঁর পরিবারের সঙ্গে ঝগড়া করে একটি গাছের নীচে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। সেই সময় তিনি ছিলেন অত্যন্ত ক্লান্ত। যখন তিনি ঘুম থেকে জেগে ওঠেন, তখন ওই গাছের পাতা খেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে পুনরুজ্জীবিত হয়ে ওঠেন। এরপর শিব ওই গাছটিকে তাঁর প্রিয় খাবারে পরিণত করেছিলেন। পরে তিনি ভাঙের দেবতা হিসাবেও পরিচিত হন। ভাঙ হোলির উৎসবের সঙ্গে যুক্ত। এটি মানুষকে আনন্দের উৎসবে মাতোয়ারা করে তোলে। 

ট্রেন্ডিং খবর