শরতের নীল আকাশে যেমন মেঘ ভেসে বেড়ায় তেমনই আকাশের জীবনে ধরা দিয়েছিল চাঁদনী।চাঁদনী ছিল মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে।মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে হলেও খুবই আদর যত্নে বড়ো হয়েছে।চাঁদনী এখন কলেজ শেষ করে মাস্টার্স করছে।আকাশ ও ছিল মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে।মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেল হলেও সে খুব শাসনের মধ্যেই বড়ো হয়েছে।যার কারনে আকাশ এখন এক বড়ো কোম্পানিতে চাকরি করার সুযোগ পেয়েছে।
ছোট বেলার থেকেই দুজনেই দুজনকে মোটামুটি চিনতো কারন তাদের বাড়ি খুব একটা দূরত্বে নয় বলা যায় কয়েকটা বাড়ির ব্যবধান মাত্র। মোটামুটি চেনা বলতে মাঝে মধ্যে দেখা সাক্ষাত হয় ওই যা।
আর সবথেকে মজার কথা হলো যতবার দেখা হয়েছে বেশিরভাগ সময়ই ঝগড়া দিয়ে কেটে গেছে।যাকে বলা যায় একেবারে সাপে নেউরে সম্পর্ক। আকাশের কিন্তু চাঁদনীর সাথে ঝগড়া করতে বেশ ভালোই লাগতো।
এই মিষ্টি ঝগড়ার মধ্যে দিয়েই আকাশ কখন যে চাঁদনীকে মন দিয়ে ফেলেছে তা সে নিজেও বুঝতে পারেনি।কিন্তু কখন সেটা কাউকে বুঝতেই দেয়নি।আকাশের এখন আর আগের মতো চাঁদনীর সাথে ঝগড়া করতে ইচ্ছা করে না।
চাঁদনীর প্রতি আকাশের এই প্রেম প্রেম ভাব চাঁদনী কিছুটা আন্দাজ করতে পেরেছিল কিন্তু আকাশের পরিবারের কড়াকড়ির কথা ভেবে অতটা গুরুত্ব দেয়নি।
এরপর থেকে চাঁদনী আকাশকে এড়িয়ে চলতে লাগল।যদিও তাদের মধ্যে খুব একটা দেখা হয় না।একদিন সন্ধ্যে বেলা আকাশ অফিস থেকে ফেরার সময় দেখল কিছু বাজে ছেলেরা মিলে চাঁদনীকে খুব বিরক্ত করছে।আকাশ তখন সাত পাঁচ না ভেবে গাড়ি থেকে নেমে তাদের হাত থেকে বাঁচিয়ে নিরাপদ ভাবে বাড়ি পৌছে দেয়।
তারপর থেকেই চাঁদনীর মনেও আকাশের জন্য কিছুটা অনুভূতি তৈরী হয়।ঘটনাচক্রে এর বেশ কিছু দিন পর চাঁদনী আকাশেরই কোম্পানিতে চাকরি পায়।কিন্তু চাঁদনী এটা জানতো না ওটা আকাশেরও অফিস।চাঁদনী অফিসে জয়েন্ট হবার দূদিন পর হঠাৎই একে অপরকে দেখে অবাক!
আকাশ চাঁদনীকে জিজ্ঞেস করল
তুই এখানে
চাঁদনী উত্তর দিল হ্যাঁ দুদিন হল আমি এখানে জয়েন্ট করে।
ওওও হ্যাঁ বস বলছিল বটে যে কয়েকজন নতুন জয়েন্ট করেছে।তা ভালোই হলো মন দিয়ে কাজ কর বুঝলি।
তা আকাশ দা তুমি বুঝি এই অফিসেই কাজ করো?
হ্যাঁ রে।এখন আসি বুঝলি পরে কথা হবে।
আচ্ছা বেশ।
এই বলে তখনকার মতো আকাশ বসের ঘরে চলে গেল।এরপর রোজ দেখা সাক্ষাত তো হতেই থাকে।এর সাথে সাথে দুজনে অফিস থেকে একসঙ্গে বাড়ি ফেরা টিফিন টাইমে একসঙ্গে আড্ডা দেওয়া আবার কোন কোন দিন অফিস ছুটির পর একসঙ্গে একটু ঘুরতে যাওয়া এগুলো চলতে থাকে।
এভাবে চলতে চলতে কখন যে তারা একে অপরের আরো অনেকটা কাছাকাছি চলে এসেছে সেটা তারা নিজেরাও বুঝতে পারেনি।অবশেষে চাঁদনী আকাশের ডাকে সারা দিলো।
এইভাবেই বেশ কয়েক বছর ভালোই কাটছিল দুজনের।হঠাৎই আকাশের শরীরটা একটু একটু করে খারাপের দিকে এগোতে লাগল।এখন আর বেশি দৌড়ঝাপ করতে পারে না একটুতেই ক্লান্ত হয়ে পড়ে সেটা চাঁদনী বেশ লক্ষ্য করেছে।
চাঁদনী আকাশকে অনেকবার বলেছিল কোনো ভালো ডাক্তারের পরামর্শ নিতে কিন্তু আকাশ অতোটা গাহ্য করেনি।ধীরে ধীরে আকাশের শরীর আরো বেশি খারাপ হয়ে পরে।
আকাশকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলে সকল পরীক্ষার পর জানা যায় যে আকাশের শরীরে মারন রোগ ক্যান্সার বাধা বেঁধেছে।খবরটা শুনে সবাই যেন পুরো থমকে গেল।।কারো মুখে কোন কথা নেই। চাঁদনী এখন খবরটা পাওয়ার পর ও যেন আর নিজের মধ্যেই নেই।এইভাবেই বছরখানেক চিকিৎসার পরও আকাশ আর সারা দেয় না।চলে যায় না ফেরার দেশে।
আকাশ চলে যাওয়ার পর চাঁদনী গভীর ড্রিপপ্রেশন এ চলে যায়।যেখান থেকে তাকে বারবার করা খুব কঠিন ছিল। চাঁদনীর এই অবস্থা তার মা বাবা মা আর সহ্য করতে পারে না।তারা ভাবে মেয়েকে যে করে হোক এই অবস্থা থেকে বার করতে হবে।
তারা অনেক চেষ্টার পরেও এই অবস্থা থেকে বার করতে পারে না তখন চাঁদনীর বাবা তার বন্ধুর ছেলে যার নাম নীল তার সাহায্য নেয়।যদি চাঁদনীর কিছুটা উন্নতি হয়।
আকাশ মারা যাওয়ারপর চাঁদনী প্রথম প্রথম কাউকেই সহ্য করতে পারতো না।কিন্ত নীল তার যত্ন ভালো ব্যবহার দিয়ে চাঁদনীর মন জয় করে নেয় এবং ধীরে ধীরে চাঁদনী ড্রিপপ্রেশন থেকে বের করে আনে।ড্রিপপ্রেশন থেকে বেরিয়ে এলেও আকাশকে কিন্ত চাঁদনী ভুলতে পারেনি।কোনদিনই হয়তো ভোলা সম্ভব নয়।
এদিকে নীল কিন্ত চাঁদনীকে ভালোবেসে ফেলেছে যদিও নীল জানতো যে চাঁদনীর ভালোবাসা সে কোনদিনই পাবে না কারন চাঁদনীর মনের কোনে আকাশ সারাজীবন ধ্রুবতারার মতো জলজল করবে।