সুস্থ–সবলভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন। কোনও সমস্যা ছিল না। একদিন হঠাৎ শোনা যায় তাঁর ‘ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাক’ হয়েছে। সমস্যা হলো এমন ঘটনা ঘটে যাওয়ার আগে প্রায়ই কিছু জানা যায় না। এই ধরনের বিপদের সম্মুখীন এখন অধিকাংশ মানুষই হচ্ছেন। আসলে আধুনিক জীবনযাত্রার পদ্ধতি, পরিবর্তিত খাদ্যভ্যাস, নিজের যত্নের অভাব শরীরে বাসা বাঁধে নানা অসুখ। বিশেষজ্ঞদের মতে, যত সময় গড়াচ্ছে তত বেশি করে প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে পড়ছি আমরা। যার ফলস্বরূপ শরীরকে চেপে ধরে একগুচ্ছ অসুখ। বিশেষ করে হার্টের সমস্যা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র সমীক্ষা অনুযায়ী, ওবেসিটি, কোলেস্টেরল, থাইরয়েডের মতো সমস্যা পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। তার হাত ধরেই জন্ম নিচ্ছে হৃদ্রোগ। দৈনন্দিন জীবনে কিছু অভ্যাসআরও বাড়িয়ে দিচ্ছে হৃদ্রোগের ঝুঁকি। জেনে নিন কোন কোন সমস্যা ডেকে আনছে এই রোগকে।
দীর্ঘ ক্ষণ এক জায়গায় বসে থাকা-
দিনের বেশির ভাগ সময়ে অফিসে কাটাতে হয়। ‘আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন’ শীর্ষক গবেষণা পত্রে প্রকাশিত সমীক্ষা অনুসারে, দীর্ঘক্ষন একভাবে বসে থাকলে তার প্রভাব পড়ে হৃদ্যন্ত্রে। তাই কাজের ফাঁকে বিরতি নিন। হাঁটাচলা করুন। যাঁরা প্রতি দিন পাঁচ ঘণ্টা বা তার বেশি সময় বসে থাকেন তাঁদের হৃদ্রোগের ঝুঁকি বেশি থাকে। হৃদ্যন্ত্র ভাল রাখতে প্রতি ঘণ্টায় পাঁচ মিনিট করে হাঁটাচলা করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা।
দাঁতের সঠিক যত্নের অভাব-
দাঁত বা মাড়ি সংক্রান্ত কোনও সমস্যা থাকলে ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে পারে হৃদযন্ত্রে। নিয়মিত সঠিক পদ্ধতিতে দাঁতের যত্ন নেওয়ার অভ্যাস হৃদ্রোগের ঝুঁকি কমিয়ে দিতে পারে। জার্নাল অব পিরিওডন্টাল রিসার্চ’ নামক গবেষণা পত্রে প্রকাশিত সমীক্ষায় অন্তত এমনই দাবি করা হয়েছে। দাঁত ও মাড়িতে জমে থাকা ব্যাক্টেরিয়া শরীরে প্রদাহের সৃষ্টি করে। আর প্রদাহজনিত সমস্যা থেকেই জন্ম নেয় হৃদ্রোগ।
একাকিত্ব-
মানসিক পরিস্থিতিও হৃদ্যন্ত্রে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা তৈরি করে। গবেষণায় দেখা দিয়েছে, সঙ্গীহীন বা একা ব্যক্তিদের হৃদ্রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা অনেক বেশি।মানসিক এবং শারীরিকভাবে সুস্থ থাকতে নিজেকে সবার থেকে আলাদা করে রাখবেন না। মন খুলে অপরের সঙ্গে কথা বলা বা সবার সঙ্গে খোলামেলা মেলামেশা করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা। কারণ এতে মন থাকে হালকা।
অতিরিক্ত শরীরচর্চা করা-
শরীর সুস্থ রাখতে ও হৃদ্যন্ত্র ভাল রাখতে আমরা অনেকেই ব্যায়াম, যোগাসন, প্রাণায়াম করে থাকি। অবশ্যই এসবের প্রয়োজনও আছে। কিন্তু শরীরচর্চার সময় যেন পরিমিত হয়। দীর্ঘ ক্ষণ ধরে ব্যায়াম করার ফলে ভালো পরিবর্তে হৃদ্যন্ত্রে চাপ পড়তে পারে। খুব বেশি পরিশ্রম বা দ্রুত কাজ করলেও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকিও থেকে যায়।
বেশি নুন খাওয়ার প্রবণতা-
দীর্ঘ দিন সুস্থ থাকতে চিকিৎসকরা সাধারণত নুনু, চিনি এড়িয়ে যেতে বলেন। কারণ, বেশি নুন খাওয়ার অভ্যাস উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদ্রোগের অন্যতম কারণ হয়ে উঠতে পারে। এমনকি, বাইরের তেল-মশলাদার ও প্রক্রিয়াজাত খাবারও হৃদ্যন্ত্রের সমস্যা তৈরি করে।
তাই শরীরে সামান্যতম সমস্যা দেখা দিলে অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
ব্যুরো রিপোর্ট, পিএস আনন্দ বাংলা।